আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পূজামণ্ডপে লক্ষ্মী প্রতিমা ভাঙচুর
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পূজামণ্ডপে লক্ষ্মী প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় উভয় গ্রুপের ১০ জন আহত ও কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল জামপুর ইউনিয়নের গাবতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানান, উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের গাবতলী এলাকায় প্রবীন আ. লীগ নেতা ও জামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হুমায়ন কবির মেম্বারের প্রতিবেশী হরি সুদনের বাড়িতে প্রতি বছরের লক্ষ্মীপূজার আয়োজন করে। গতকাল সন্ধ্যায় পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে যান নারায়ণগঞ্জ আ. লীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু। একই সময়ে হুমায়ুন মেম্বার যুবলীগের সভায় যেতে নেতাকর্মীদের নিয়ে রাস্তায় অপেক্ষা করছিলেন।
বিরুর গাড়ি বহর ব্যারিকেট দিয়ে হুমায়ুন মেম্বারের লোকজন রাস্তা পাড় হচ্ছিলেন। উভয় নেতার সঙ্গে আ. লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিলেন। এ সময় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সংঘর্ঘের সৃষ্টি হলে দুই গ্রুপের প্রায় ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। সংঘর্ষে হুমায়ুন কবিরের ছেলে রুবেল মিয়া, রোমান মিয়া, শ্যালক রিপন মিয়া মারাত্মক আহত হন। অন্যদিকে ডা. বিরুর সমর্থক মোখলেছুর, নাজমুল হোসনে, নাফি মিয়া ও জাহিদ হোসেন আহত হয়।
এ ব্যাপারে ডা. বিরু বলেন, মণ্ডপে যাওয়ার পথে হুমায়ুন মেম্বার বাধা দিলে তাকে বুঝিয়ে পূজামণ্ডপে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তার বড় ছেলে রোমান মিয়া একটি রিভলভার নিয়ে গুলি করার জন্য তাক করলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এ সময় গাড়ি বহরে ইটপাটকেল ছুড়লে দুই একটি গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে যায়। প্রতিমা ভাঙচুরের ব্যাপারে বলেন, আমরা মণ্ডপ পর্যন্ত যেতেই পারিনি, রাস্তা থেকে ফিরে এসেছি।
হুমায়ুন মেম্বার জানান, আমি যুবলীগের মিটিংয়ে যাওয়ার পথে রাস্তায় বিরুর গাড়ি বহর থেকে কয়েকটি মটরসাইকেল এসে গতিরোধ করে আমার ওপর হামলা করে। এ সময় আমার দুই ছেলে, শ্যালক ও আশপাশের মানুষ এগিয়ে আসলে তাদেরকে রড ও হকিস্টিক দিয়ে মারাত্মক আহত করে। এ সময় পুলিশের সহযোগিতায় আমি আহতদের সোনারগাঁ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে যাই। প্রতিমা ভাঙচুরের ব্যাপারে বলেন, আমি পুলিশের সহযোগিতায় আহতদের নিয়ে হাসপাতালে ছিলাম। তবে যারা এর সঙ্গে জড়িত আমি তাদের শাস্তি চাই।
উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার ভৌমিক জানান, কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত এখন সঠিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা আগামীকাল গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারব। জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
সোনারগাঁ উপজেলার একাধিক আ. লীগ নেতা বলেন, প্রতিমা ভাঙচুর স্বাধীনতা বিরোধীদের একটি চক্রান্ত। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মিথ্যা হয়রানি করতে পরিকল্পিতভাবে প্রতিমা ভাঙচুর করেছে বলেও তাদের ধারণা। তাছাড়া এ দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সুযোগে দেশকে অস্থিতিশীল করতে তৃতীয় কোনো পক্ষ এ ঘটনা ঘটাতে পারে।
ঘটনার খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) খোরশেদ আলম, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার ও সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, সংঘর্ষ ও প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে থানা পুলিশের কয়েকটি টিম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দোষীদের খুঁজে বের করতে আমাদের বিশেষ টিম ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার জানান, আমরা জানতে পেরেছি প্রতিমা ভাঙচুরের সময় বাড়িতে কোনো পুরুষ লোক ছিল না, তারা সবাই অতিথিদের অপেক্ষায় রাস্তায় ছিল। কে বা কারা ভাঙচুর করেছে মহিলা ঠিক চিনতে পারেনি। তবে দুই একজনের নাম বলেছে। তদন্ত করে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে বাকিদের খুঁজে বের করা সহজ হবে। এ ব্যাপারে থানা পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করছে।
Source|: কালের কণ্ঠ ১৭ অক্টোবর, ২০১৯