জন্মাষ্টমীর আধ্যাত্মিক বা যৌগিক তাৎপর্য

দেবকী হলেন ‘দৈবশক্তি’ আর বসুদেব হলেন ‘জীবাত্মা’। পঞ্চপ্রাণের পিতা বলে তিনি বসুদেব। প্রকৃত পক্ষে বসুদেব এবং দেবকী হলেন জীবাত্মা ও পরাপ্রকৃতির প্রতীক।ভাদ্রমাস হলো, ভদ্র+ষ্ণ=ভাদ্র। অর্থাৎ ভাদ্র মাস শুভ বা মঙ্গলের মাস। আমরা জানি, কৃষ্ণপক্ষে চন্দ্রের শক্তি ক্ষয় বা ক্ষীণ হয় এবং শুক্লপক্ষে এর শক্তি বৃদ্ধি পায়। অন্তর্জগতে চন্দ্র হচ্ছে ‘মন’। অর্থাৎ মনই চন্দ্র। অষ্টমী তিথিতে চন্দ্রের তথা মনের ক্ষয় হতে হতে অর্ধেকে গিয়ে পৌঁছায়। মনের চঞ্চলতা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। সাধনার মোক্ষম সময়। মন যখন বহির্জগতের কামনা বাসনা মুক্ত হয়, তখনই তা অন্তর্মুখি হলে, অপুর্ব জ্যোতি দর্শন করা যায়।

মাটি, জল, তেজ, বায়ু, আকাশ, মন, বুদ্ধি ও অহংকার, এই অষ্টতত্ত্বই আমাদের জীব প্রকৃতি। শ্রীকৃষ্ণ ত্রিগুনাতীত বিশ্ব প্রতিভূ। অষ্ট প্রকৃতির উর্ধ্বে তিনি। তাই কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে তাঁর জন্ম।ভগবান জন্ম নিলেন কংসের কারাগারে। কম্+স=কংস। ‘কম্’ মানে কামনা বাসনা।কারাগার থাকে রুদ্ধ, হলো উন্মুক্ত। অর্থাৎ কামনা বাসনা যুক্ত দেহরুপ কারাগারের রুদ্ধ দুয়ার একমাত্র প্রাণকৃষ্ণের কৃপায় খুলে যায়। অন্য কোনো ভাবে নয়। যমুনা শ্রীকৃষ্ণের অতিপ্রিয়। মানব দেহের দক্ষিণ অংশে যা পিঙ্গলা নাড়ী। সাধক পিঙ্গলা রুপী যমুনা পার হতে পারলে, আনন্দ লোকের সন্ধান পান, হয় আত্মদর্শন।

বসুদেবকে যমুনা পার করায় শিবশক্তি রুপী শিবা। যিনি সহস্রারের মহাপদ্মে বিরাজিতা, তিনিই শিবাজি তথা শিবশক্তি। শিবশক্তি সহায় থাকলে, ভবনদী সহজে পার হওয়া বা অতিক্রম করা যায়। তারউপর অনন্ত শক্তিধারী, ফনা রুপিনী সর্প, কুন্ডলিনী শক্তির প্রতীক।তাহলে দেখা যাচ্ছে, শৃগালী রুপী শিবশক্তি, জীবাত্মারুপ বসুদেব, পরমাত্মারুপ শ্রীকৃষ্ণ আর অনন্ত শক্তির প্রতীক কুন্ডলিনী, এদের সমন্বিত যোগচিত্রায়িত রুপই শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য নির্দেশ করে। পরমকৃপাময় সচ্চিদানন্দ ভগবান গোলকপতি শ্রীকৃষ্ণ সবার জীবন মঙ্গলময়, কল্যাণময় আর সুন্দরময় করে রাখুন নিরন্তর।

অয়ন দাশ গুপ্ত দাদার টাইমলাইন থেকে নেয়া