শিব কি..শিবলিঙ্গ মানে কি ?

আক্ষরিক বিশ্লেষণে দেখা যায়- ‘শিব’ শব্দের অর্থ ‘মঙ্গল’ আর ‘লিঙ্গ’ শব্দের অর্থ প্রতীক বা চিহ্ন. শাস্ত্র ‘শিব’ বলতে নিরাকার সর্বব্যাপি পরমাত্মা বা পরমব্রহ্মকে বোঝায়. তাই ‘শিবলিঙ্গ’ হচ্ছে মঙ্গলময় পরমাত্মার প্রতীক।

[* ভ্রষ্ট ব্যক্তিগণ বা অজ্ঞান অনেকেই ‘শিবলিঙ্গ’ বলতে পুরুষাঙ্গ বিশেষ মনে করেন-কিন্তু এটা ভ্রান্ত ধারণা।

একথা সহজেই অনুমেয় যে, নিরাকার পরমাত্মার

পুরুষাঙ্গ থাকতে পারে না. তাছাড়া পুরুষাঙ্গের সংস্কৃত

প্রতিশব্দ ‘শিশ্ন’. আর ‘লিঙ্গ’ শব্দের অর্থ ‘প্রতীক’ বা ‘চিহ্ন’.

শিবপুরাণ ও অন্যান্য সকল শাস্ত্রেই ‘শিবলিঙ্গ’ বলতে ‘

পরমব্রহ্মের প্রতীক’-ই বোঝানো হয়েছে.]

 

শিবপুরাণ অনুসারে ভগবান শিবই একমাত্র ব্রহ্মরূপ হওয়ায় তাঁকে ‘নিষ্কল’ (নিরাকার) বলা হয়. যেহেতু তিনি ‘সর্বশক্তিমান’ তাই তিনি জগতকল্যাণের জন্য রূপধারণও করতে পারেন. রূপবান হওয়ায় তাঁকে ‘সকল’ বলা হয়. তাই তিনি ‘সকল’ এবং ‘নিষ্কল’-দুইই. শিব নিষ্কল-নিরাকার হওয়ায় তাঁর পূজার আধারভূত লিঙ্গও নিরাকার অর্থাৎ লিবলিঙ্গ শিবের নিরাকার স্বরূপের প্রতীক. তেমনই শিব সকল বা সাকার হওয়ায় তাঁর পূজার আধারভূত বিগ্রহ সাকাররূপ। ‘সকল’ (সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসহ সাকার) এবং ‘অকল’ (হস্তপদমুখচক্ষু ইত্যাদি অঙ্গ-আকার থেকে সর্বতোভাবে রহিত নিরাকার) রূপ হওয়াতেই শিব ‘ব্রহ্ম’ শব্দ দ্বারা কথিত পরমাত্মা. এইজন্যই সকলে লিঙ্গ (নিরাকার স্বরূপ) এবং মূর্তি (সাকার স্বরূপ) -দুয়েতেই পরমেশ্বর শিবের পূজা করে থাকেন. শিব ব্যতীত অন্য যেসকল দেবতা আছেন, তাঁরা সাক্ষাৎ ব্রহ্ম নন, তাই কোথাও তাঁদের নিরাকার লিঙ্গ দেখা যায় না. লিঙ্গ সাক্ষাৎ ব্রহ্মের প্রতীক।

তথ্যসূত্র: শিবপুরাণ

আদি ধর্মগ্রন্থ বেদ

1. শিবলিঙ্গের পূজা কেবল ভারত আর শ্রীলঙ্কায় সীমাবদ্ধ নয়:

প্রাচীন রোমে ‘প্রায়াপাস’ নামে যে বিগ্রহের পূজা হতো, অনেকের মতে সেটি শিবলিঙ্গই ছিল. হরপ্পা-মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতার যে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যেও পাওয়া গিয়েছে বেশ কিছু শিবলিঙ্গ।

 

২. শিবলিঙ্গে থাকে মোট তিনটি অংশ:

সবচেয়ে নীচের চারমুখী অংশটি থাকে মাটির নীচে. তার উপরের অংশটি আটমুখী, যা বেদীমূল হিসেবে কাজ করে. আর একেবারের উপরের অর্ধবৃত্তাকার অংশটি পূজিত হয়. এই অংশটির উচ্চতা হয় এর পরিধির এক তৃতীয়াংশ. এই তিনটি অংশের সবচেয়ে নীচের অংশটি ব্রহ্মা, তার উপরের অংশটি বিষ্ণু ও একেবারে উপরের অংশটি শিবকে প্রতীকায়িত করে. বেদীমূলে একটি লম্বাকৃতি অংশ রাখা হয়, যা শিবলিঙ্গের মাথায় ঢালা জল বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে. এই অংশের নাম গৌরীপট্ট, যা মূলত যোনিপ্রতীক।

3. শিবলিঙ্গ পূজার মধ্যে কোনও অশ্লীলতা নেই:

শিবলিঙ্গ একই সঙ্গে শিবের সৃজনাত্মক ও ধ্বংসাত্মক রূপের প্রতীক. অনেকে যে একে পুরুষাঙ্গের পূজা হিসেবে ব্যাখ্যা করে অশ্লীলতা বলে মনে করেন, তা একেবারেই ভুল ব্যাখ্যা. তা ছাড়া, হিন্দু ধর্মে শিবকে নিরাকার বলে মনে করা হয়. কাজেই তাঁর লিঙ্গ যে একেবারেই প্রতীকী বিষয়, তা বোঝা প্রয়োজন।

4. স্বামী বিবেকানন্দের ব্যাখ্যা:

স্বামীজী ‘অথর্ববেদ’-এর শ্লোক উদ্ধৃত করে শিবলিঙ্গকে আদি ব্রহ্মের স্বরূপ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন. তাঁর মতে, আদি ও অন্তহীন ব্রহ্মের প্রতীক হল শিবলিঙ্গ।

5. শিবলিঙ্গের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:

শিবলিঙ্গের দিকে তাকালে দেখা যাবে এর লম্বাকৃতি অংশটিতে পরপর তিনটি খাঁজ কাটা রয়েছে. বিজ্ঞানী নিলস বোরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এই তিনটি খাঁজ আসলে অণুর তিনটি উপাদান- প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেকট্রনের প্রতীক. এই তিনটি উপাদান দিয়েই তৈরি হয়েছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড. অর্থাৎ কার্যত ব্রহ্মাণ্ডের গঠনের প্রতীক হল শিবলিঙ্গ।

6. শিবলিঙ্গের বৈদিক ব্যাখ্যা:

শিবলিঙ্গ যেহেতু ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক সেহেতু শিবলিঙ্গ পূজা করার অর্থ, আদি শক্তির সঙ্গে চৈতন্যের মিলনকে স্মরণে রাখা. এই ‘মিলন’-এর অর্থ অবশ্য শারীরিক মিলন নয়, বরং এ এক অতিপ্রাকৃত মিলন. প্রসঙ্গত এ কথাও বলা প্রয়োজন যে, সংস্কৃত ভাষায় ‘লিঙ্গ’ শব্দটির অর্থ কিন্তু পুরুষাঙ্গ নয়, বরং চিহ্ন. নির্গুণ শক্তি যখন সগুণ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা শুরু করে তখন লিঙ্গই হয়ে ওঠে সেই রূপান্তরের চিহ্ন।

7. শিবলিঙ্গের গায়ে যে সাপটি থাকে তা আসলে সুপ্ত চেতনার প্রতীক:

শিবলিঙ্গের গায়ে অনেক সময়ে যে সাপটি প্যাঁচালো অবস্থায় দেখা যায়, সেটি আসলে কুলকুণ্ডলিনীর প্রতীক. এই শক্তির জাগরণকে চিহ্নিত করে শিবলিঙ্গ। আসলে হাজার বছরের বিদেশি শাসনে পরাধীন থাকায় বিদেশী শাসকগন সনাতন ধর্মকে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করেছে. শুধু উপাসনালয় ভেঙ্গেই ক্ষান্ত থাকেনি, নানা কুৎসা রটাতেও পিছপা হয়নি। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় মুসলিম শাসকরা মন্দির ধ্বংসে মনযোগী ছিল আর ইংরেজরা মন্দির ভাঙ্গেনি ঠিক তবে বুদ্ধিমান পাদ্রীরা আমাদের ধর্মকে আঘাত করেছে অন্যভাবে। 1815 সালে আ ভিউ অফ দ্য হিস্ট্রি, লিটারেচার, অ্যান্ড মিথোলজি অফ দ্য হিন্দুজ গ্রন্থে লেখক ব্রিটিশ।