“নমস্কার” কি ও কেনো করবেন ?
নমস্তে বা নমস্কার কোথা থেকে এলো,এর মানেই বা কী!বৈদিকযুগ থেকে মহাভারতের যুগ পর্যন্ত সকলে পরস্পর “নমস্তে” বলে সম্বোধন করতেন। তার পর যখন থেকে মতামতান্তর এবং অনেক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে,সেই সময় তারা পরস্পর সন্মান প্রদর্শনার্থে পৃথক পৃথক শব্দ স্থির করে নেন, যেমন-Hi, Hallo এইসব,কেউ আবার-“আস্লামুওয়ালাইকুম”,’’ওআলেকুম সালাম”,”আদব অর্জ” ইত্যাদি শব্দ বিধর্মীগণ এবং বিদেশীরা কল্পনা করে নেয়।
হিন্দুদের মধ্যেও আবার মত ও পন্থবাদীরা অনেক শব্দ কল্পনা করেছে, ‘কেউ জয় শিব’ ‘জয় হরি’ ‘জয় গোবিন্দ’ ‘জয় রাধে শ্যাম’ ,’হরে কৃষ্ণ’,’জয় গুরু’ ‘জয় রামজী কী’,’জয় কৃষ্ণজী কী’ প্রভৃতি অনেক সম্ভাষণ শব্দ প্রয়োগ করে থাকে ।
মহাভারতের পূর্বে ভূমণ্ডলে আর্যদের অখণ্ড রাজ্য ছিল ।মানুষ সকলেই ছিল বৈদিক ধর্মাবলম্বী,তারা পরস্পর “নমস্তে” বলার মাধ্যমেই কুশল আদান প্রদান করত।বর্তমান যুগে আবার বহু মহাঋষির কৃপায় মানুষ বৈদিক সিদ্ধান্তকে আবার হৃদয়ঙ্গম করতে লাগলেন।আর সেই সঙ্গে সঙ্গে সবাই “নমস্তে” এর ধারা চালু করা আরম্ভ করল ।
নমস্তে শব্দের অর্থ কী নমস্কার বা নমস্তুতেবাঃ সংক্ষেপে “নমস্তে” হচ্ছে বৈদিকযুগ হতে প্রচলিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কর্তৃক ব্যবহৃত অভিবাদনসূচক শব্দ। সাধারণত দুই হাতজোড় করে ‘নমস্কার’ শব্দটি উচ্চারণ করা হয়ে থাকে বলে একে অঞ্জলি মুদ্রা বা প্রণামও বলা হয়।“নমস্কার” শব্দটি এসেছে মূল সংস্কৃত শব্দ “নমঃ” থেকে যার আভিধানিক অর্থ সম্মানজ্ঞাপনপূর্বক অবনত হওয়া,সহজ ভাবে “আমি তোমায় মান্য করি-তোমার সমাদর করি বা তোমায় শ্রদ্ধা জানাচ্ছি”!এবার এই “তোমায়” কাকে বোঝাচ্ছে? ইদানিং সনাতন ধর্ম বিরোধী নানা কুপ্রচারণার অংশ হিসেবে একশ্রেণীর কুচক্রী মহল প্রচার করে চলেছে যে যেহেতু নমস্কার শব্দটি অবনত হওয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট তাই সাধারণ জনগণকে নমস্কার জানানো উচিত নয়। দেখা যাক,এ সম্পর্কে বৈদিক শাস্ত্র কি বলে!
“যো দেবো অগ্নৌ যো অপসু যো বিশ্বং ভূবনাবিবেশ য ওষধীষু যো বনস্পতি তস্মৈ দেবায় নমো নমঃ” (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ২/১৭) “যোগ যেমন পরমাত্মার দর্শনের সাধন বা উপায়, নমস্কারাদিও অনুরূপ বলিয়া তাঁহাকে নমস্কার জানাই।”
তিনি কিরুপে?তিনি “দেব” অর্থাত পরমাত্মার প্রকাশভাব । তিনি কোথায়? তিনি আছেন অগ্নিতে,জলে,তৃণ -লতাদিতে,অশ্বাথাদি বৃক্ষে,তিনি এই বিশ্বভুবনে অন্তর্যামীরুপে অণুপ্রবিষ্ট হইয়া আছেন।”
তাই যখন কাউকে নমস্কার জানানো হয় তখন মূলত সর্বজীবে অন্তর্যামীরুপে অবস্থিত পরমাত্মাকেই প্রণতি নিবেদন করা হয়,কোন মনুষ্যদেহকে নয়।সুতরাং,নমস্কার সকলকেই জানানো যায়,দুইহাত জোড়করে মূলত শান্তি মনে পূর্বক বিনয়ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়।সংস্কৃতিভেদে করজোড়ে কিছুটা বৈচিত্র্য দেখা যায় যেমন দেবতাদের উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করতে সাধকরা মাথার উপরে দু’হাত জোড় করে থাকে, আবার কোন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাতে নমস্কার জানাতে বুকের বরাবর হাত জোড় করা। এই নমস্কার একই সাথে পরমাত্মাকে প্রণতি ও আয়ুষ্মান (i.e.দীর্ঘায়ু কামনা)-কেও নির্দেশকরে। আবার- নমঃ জ্যেষ্ঠায় চ কনিষ্ঠায় চ নমঃ পুর্বজ চাপরজায়ো চ নম মধ্যমায়ো চ পোগলভ্য চ নম জঘন্যয় চ বুধন্যয় চ সোভ্যয়। যজুর্বেদ ১৬.৩২ “শ্রদ্ধা (নমঃ) গুরুজনদের এবং কনিষ্ঠদের, পূর্বজদের এবং অনুজদের, আত্মীয়দের, ধনী-দরিদ্র সকলকেই” এখানে একটি বিষয় পরিস্কার নমস্কার ছোট বড়ো, উচু-নীচু সকলের জন্য প্রযোজ্য।
এছাড়া বাল্মীকী রামায়ণে ও কৃষ্ণদৈপায়ণের মহাভারতেও শ্রীরাচন্দ্র এবং শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং “নমস্তুতেবাঃ” সহজ ভাবে “নমস্তে” বা “নমস্কার” ব্যবহার করতেন।
এবার আপনার চিন্তা করুন আমাদের “জন্মগত পবিত্র বৈদিক নিয়মাবলী” ত্যাগ করে কি আপনি কতিপয় মতামতান্তরী, বিধর্মীগণ এবং বিদেশীদের কল্পিত নিয়মাবলী মেনে চলবেন? না নিজের পবিত্র বৈদিক নিয়মাবলী কে মেনে চলবেন?