নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে মন্দিরের সামনের জায়গা দখল করে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের ছয়শ বছরের প্রাচীনতম হিন্দু সম্প্রদায়ের একমাত্র বিষ্ণু মন্দিরটির সামনের জায়গা দখল করে সুশীল রায় নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বাড়ি নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঐতিহ্যবাহী পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ ওই বিষ্ণু মন্দিরের প্রধান ফটকের গোড়া থেকে পুরো খোলা চত্বরটি দখলে নিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, মোহনগঞ্জ পৌর শহরের দৌলতপুর এলাকার ঐতিহ্যবাহী শিয়ালজানি খালের তীর ঘেঁষে ওই বিষ্ণু মন্দিরটি ৮৫৫ বঙ্গাব্দে নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকেই বংশ পরম্পরায় এলাকার হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিষ্ণু বক্তরা নিয়মিত ওই মন্দিরে পূজা পার্বন করে আসছেন।

আজ বুধবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে বিষ্ণু মন্দিরের পুরো চত্বরটি দখল করে জনৈক সুশীল রায় ও তার ভাইয়েরা মিলে সেখানে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এতে করে বিষ্ণু মন্দিরের পূজারী, ভক্তবৃন্দ ও দর্শানার্থীদের খোলা চত্বরে বসার স্থানটিও আর রইল না। শুধু তাই নয়, অবশিষ্ট রইল না মন্দিরে প্রবেশের একমাত্র রাস্তাটিও।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সুশীল রায় বলেন, দৌলতপুর এলাকার মৃত নরেন্দ্র কিশোর রায়ের বাড়িতে পারিবারিকভাবে গড়ে উঠা ওই মন্দিরটিতে তাদের পূর্ব পূরুষের আমল থেকেই তারা পারিবারিকভাবেই পূজা দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু মৃত নরেন্দ্র কিশোর রায়ের ছেলে ধীরেন্দ্র কিশোর রায়ের কাছ থেকে গত ৯ বছর আগে ওই মন্দিরের সামনে প্রায় ১০ শতক জায়গা সাফ কাওলামূলে আমরা তিন ভাই মিলে ক্রয় করি। তবে ধীরেন্দ্র কিশোর রায় তার ওই জায়গা আমাদের কাছে বিক্রি করার কয়েক বছর আগে তিনি তাদের ওই পারিবারিক মন্দিরটি দেবোত্তর করে দেন।

তিনি আরো বলেন, ওই মন্দিরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। আমরা সেটির সংস্কার করে নিয়মিত সেখানে পূজা দিয়ে আসছি এবং আমরা মন্দিরের কোনো জায়গা দখল করে বাড়ি নির্মাণ করছি না। বরং আমরা আমাদের ক্রয়কৃত জায়গা থেকে মন্দিরের রাস্তার জন্য ৩ ফুট জায়গা রেখে বাড়ি নির্মাণের কাজ করছি।

এ ব্যাপারে ওই জায়গার সাবেক মালিক ধীরেন্দ্র কিশোর রায়ের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা অমল চৌধুরী অভিযোগ করে জানান, সার্বজনীন দেবোত্তর বিষ্ণু মন্দিরটির দখলকার সুশীল রায় মন্দির কমিটির সম্পাদক বিপ্লব রায়ের আত্মীয়। ফলে তিনি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। 

এ বিষয়ে বিষ্ণু মন্দির কমিটির সম্পাদক বিপ্লব রায় বলেন, সুশীল রায় জায়গা কিনে এবং তিনি তার খরিদান জায়গা থেকে মন্দিরের রাস্তার জন্য ৩ ফুট জায়গা রেখেই সেখানে বাড়ি নির্মাণ করছেন।

মোহনগঞ্জ উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অমল সরকার ও সাধারণ সম্পাদক বিমল পাল বলেন, বিষ্ণু মন্দির রক্ষার যাবতীয় দায়িত্ব মন্দির পরিচালনা কমিটির। এ বিষয়ে তাদেরকেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদী মাহমুদ আকন্দ বলেন, খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্রঃ কালের কন্ঠ ১৯/১২/২০১৮